রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কবিতা

 সুদকষা

মোহনা মজুমদার


তুমি উড়তে চেয়েছিলে ডানা মেলে

ছুঁতে চেয়েছিলে দিগন্তের কৃষ্ণকলি

ভাসতে চেয়েছিলে তরীর বুকে

ঠিক যতটায় তোমার আমার জায়গা ধরে

মিশতে চেয়েছিলে তীব্র বন‍্যতায় 

শুধু হাত টা ধরতে চাওনি।


সবাই শুধু অপশনে ক্লিক করে

মিলে গেলে, চলো হাটি কিছু পথ

নইলে সীন না করা অথবা আনফ্রেন্ড বাটন

লাস্ট অপসন 'ব্লক' তো আজ মুড়িমুড়কি

কি সহজ ডিলিট করা।

জীবন কিন্তু চলতেই থাকে নিজের গতিতে

দিনের শেষে সবই হয় জঞ্জাল।

তাই তুমি করেছো আগাছা সাফ,

আমি করেছি স্মৃতির সুদকষা।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০

সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের "চোখ" কবিতাপত্র থেকে নেওয়া কবি শান্তনু পাত্রের  ইন্টারভিউ ---

আমাদের অতিথি  ওপার বাংলার কবি শান্তনু পাত্র 

(শান্তনু পাত্র পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার প্রতিশ্রুতিশীল ও মেধাবি তরুণ কবি। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রথম শ্রেণির শতাধিক পত্র-পত্রিকায় কবির কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।"ঢলকিশোর" নামে জনপ্রিয় একটি সাহিত্য পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করছেন। এ পর্যন্ত পাঁচটি কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।  )

১০ প্রশ্নের মুখোমুখি

১. আপনার লেখালেখি ও বইয়ের নাম সহ সংক্ষিপ্ত আকারে বলুন।

উত্তরঃ  আমি সাধারণত কবিতাই লিখি। আমার প্রকাশিত মোট কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫ টি।

 ১.জাতিস্মর
২, জিরো গ্র‍্যাভিটি
৩, সংসার পেতেছে প্রিয় গাছ
৪,পাথরকুচি
৫.একতারার কান্না।

এছাড়া সম্প্রতি অনলাইন গুগল বুকে "সাধকের নরম চিৎকার" বলে একটি ই-বুকও প্রকাশিত হয়েছে।

২. আপনি যদি না লিখতেন বাংলা সাহিত্যের কি কোনো ক্ষতি হতো?

উত্তরঃ না, একফোঁটাও ক্ষতি হত না। কত বিদগ্ধ কবি বাংলা সাহিত্যকে হিমালয় সদৃশ চূড়ায় নিয়ে গেছেন। বর্তমানেও দুই বাংলার কত নবীন-প্রবীণ লেখক/কবি নিরন্তর কত ভালো লিখে চলেছেন। সেখানে আমি যৎসামান্য এই লেখা না লিখলে কিচ্ছু ক্ষতি হত না বাংলা সাহিত্যের।

৩. কখনও কি মনে হয় লেখালেখি করে খামখা সময় নষ্ট করছেন?

উত্তরঃমাঝেমাঝে ডিপ্রেশন এলেই মনে হয় এমন কথা। তবে তা সাময়িক। পরমুহূর্তেই সব ভুলে আবার কবিতায় মজে যাই।

৪. আসলে কেনো লেখেন ?

উত্তরঃ কেন যে লিখি! - একথা সঠিক বলতে পারবো না। কখনও কিছু যন্ত্রণা প্রকাশ করতে, কখনও কিছু ভালোলাগা প্রকাশ করতে, কখনও ভালোবাসায়, কখনও নিজেকে খুঁজে পেতে।

৫. আপনার সৃষ্টিকর্মগুলোকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন। আপনার  নিজের লেখা, উপজীব্য, দর্শন -এগুলো নিয়ে সংক্ষেপে শুনতে আগ্রহী।

উত্তরঃ আমি মূল্যায়ন করি এইভাবে যে, আজ থেকে ৫০ বছর পর আমার লেখা কেউ পড়বে কিনা, আমার মৃত্যুর পর এই লেখা কেউ পড়বে কিনা।আমি চাই আমার কবিতা ফসলের মাঠ হোক, রাজার সিংহাসন হোক, মৃণালের মূল হোক, রাজপথ হোক, অন্ধকার হোক, আলো হোক। আমার কবিতায় এমন দর্শন রাখতে চাই যা চিরন্তন হবে। দীর্ঘ-দীর্ঘ সময় পরেও কোনো পাঠক আমাকে পড়লে আমি যেন তাঁর অন্তরে ঢুকে যেতে পারি।

৬. আপনার নিজের লেখা অন্তত ৫টি প্রিয় কবিতার নাম শুনতে চাই। লেখা অন্তত ৫টি প্রিয় কবিতার নাম শুনতে চাই।

উত্তরঃ 'অদ্ভুত ঈশ্বর', 'স্বগত সংলাপ', 'বাইশে শ্রাবণ', 'মুকুট', 'কসাই'।

৭. লেখালেখির কারণে কোনো সম্মাননা, পুরস্কার, মূল্যায়ন?

উত্তরঃ না, এখনও পর্যন্ত কোনো সম্মাননা বা পুরস্কার পাইনি। আর মূল্যায়ন, তা ভবিষ্যৎ পাঠকের হাতে তুলে দিলাম।

৮. লেখালেখি নিয়ে কোনো আবেগপ্রবণ  ঘটনার কথা কি মনে পড়ে ?

উত্তরঃ  অনেকের ভালোবাসার কথাই মনে পড়ে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল, আমার কবিতা পড়ে আমার চেয়ে বয়সে বড়ো এক মহিলা আমাকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন।

 ৯. কখনও কি মনে হয়েছে একদিন সত্যি সত্যি লেখা ছেড়ে দেবেন ?

উত্তরঃ আমি কোনোদিনই লেখাকে ছেড়ে দেবো না, তবে কোনোদিন যদি সে আমাকে ছেড়ে যায় তার দায়িত্ব আমি নিতে পারছি না।

১০.  নিজের লেখক জীবন নিয়ে সক্ষেপে মূল্যায়ন।

উত্তরঃ এইতো  কয়েকবছর আমি লিখছি, তাই মূল্যায়ন এখনই কেন? এই তো সবে সাধনার শুরু। ধ্যানমগ্ন হতে চাই। গভীরভাবে ডুবে যেতে চাই। বোধিলাভ করতে পারলে তারপর মূল্যায়ন। এখন মূল্যায়নের প্রশ্নই নেই।

(সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন ঔপন্যাসিক  ও  কবি মোস্তফা সোহেল )

..............................................

শান্তনু পাত্রের কবিতা 

ইচ্ছামৃত্যু

আগুন নিভে আসে
এখন শুধু মরা কাঠের চিৎকার

অন্ধ হওয়ার ভয়ে
মৃত্যুবর্ণা ফুলের কাছে যাইনি কখনো

এখানে স্মৃতির কোনো রং নেই, অভিপ্রায় নেই
ঘুমের পালকে দেবতা হয়ে উঠি

পূর্বজন্মের স্পর্ধায়
স্বেচ্ছামৃত্যু আমিও নিতে রাজি।



অন্ধকূপ

কামনা কলঙ্কপ্রিয়, জখমে ভরা
গাছেরা বাকল খোলে, অসহ জরা

কাজলের মতো কালো, অশ্রুবিন্দু আলো
নজর না লাগে, সেই ভালো

বেলা যত বাড়ে তত গাঢ় হয় রোদ
                                           নতুনত্ব রূপে
বিষাদ আঁকবে কোথায়...
                         মেধাবী সন্ধের অন্ধকূপে?



আত্মাপাঠ

ক্রমশ আবছা তট
ক্রমশ আবছা হয়ে উঠছ তুমি
তোমার মুখ নৌকার মতো দোদুল্যমান
চৌকাঠ ডিঙানোর ভাষা ভুলে গেছি

ডোরাকাটা আমাদের ভয়
কলিচুন লাগিয়ে লাগিয়ে
প্রতিবার ক্ষতমুখ পুড়িয়েছি

এসব দিনে আনমনা সেজে থাকা ভালো
তরল ভালোবাসায় অসুখ সেরে যাবে

চলো, আর একবার গাছেদের পাঠশালায় ভর্তি হই
চলো, কলসির জরায়ু থেকে বেরিয়ে আসা
কোমল জলে হাত-মুখ ধুয়ে বসি
এখন তো আত্মপাঠের সময়,
এখন তো আত্মাপাঠের সময়!


শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

কবিতা

ইচ্ছামৃত্যু

শান্তনু পাত্র


আগুন নিভে আসে
এখন শুধু মরা কাঠের চিৎকার

অন্ধ হওয়ার ভয়ে
মৃত্যুবর্ণা ফুলের কাছে যাইনি কখনো

এখানে স্মৃতির কোনো রং নেই, অভিপ্রায় নেই
ঘুমের পালকে দেবতা হয়ে উঠি

পূর্বজন্মের স্পর্ধায়
স্বেচ্ছামৃত্যু আমিও নিতে রাজি।